বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শিক্ষা নিয়া দুইডা কতা আছিল... Understanding Education...




শিক্ষা নিয়া বহু জ্ঞানী-গুণী অনেক কথা কইছে। তয় আমারও কিছু কইবার মন চাইল। শিক্ষা নিয়া বড় দুঃচিন্তায় পরছি। দুঃচিন্তার হাজার কারণের মধ্যে জব মার্কেটের অনিশ্চিতা প্রধানতম প্রতীয়মান হইতাসে। হুম, মানব সভ্যতা চলবার লাগছে অর্থনীতির উপর বেইজ কইরা। আর বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির জমিদারী ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার হাতে। সে বলে যে, যাদের ব্যবসা-বাট্টা ভাল তারাই উন্নত, হেইডা মাইর‌া –কাইটা য্যামনে ইচ্ছা করেন। এই হাওয়ার বাইরে যাওয়ার উপায় আমাগো নাই। তাই প্রথমে নিজের অর্থনীতির উন্নতির চিন্তা করা লাগে। সেই দিক বিবেচনা করলে অথবা না-করলেও মাস শেষে একটা ভাল এমাউন্টের বেতন ছাড়া আজকের বাজারে চলার উপায় আছে? চাল বলেন আর ডাল- হিসেব কইরা কিনবার গেলে আলু কিন্যা বাড়ি ফিরন লাগবো। তো এই অইল আমাগো বর্তমান অবস্থা। অর্থাৎ আমরা এমন এক সিস্টেম তৈয়ার করলাম, যার জন্য আমাদের অলটাইম দৌড়ের উপর থাকতে অয়। অর্থাৎ অর্থ এবং অর্থ সংক্রান্ত সকল নীতিই হইল আসল, বাকি সব নকল। না, বিষয়টা এভাবে কইলেও, ইহা সমাধানের তরিকা আমার জানা নাই। তয় আপনের চিন্তায় নতুন কিছু যোগ হয়, এই আশায় বাক্য ব্যয়ের প্রয়াস পাইলাম।

আপনে যা-ই করতে চান ট্যাকা দরকার। যেমন আপনার গিটার বাজাতে ভাল্ লাগে- একটা নির্মল আনন্দ- সেই গিটার কিনতে হবে টাকার বিনিময়ে। অথচ নির্মল আনন্দটা ট্যাকা দিয়া কিনতে পারেন না। ট্যাকা হইলে বাঘের দুধ পাওয়া যায়, আর টাকা না হইলে গরুর দুধও পাওয়া যায় না। তাইলে ট্যাকার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার যে করে, সে পাগল। আবার ৫০ টাকা দরে চাল কিনা খাইলেও আপনার কিছু করার নাই। মানে সিস্টেম তো আপনে ভাঙতে পারেন না, অথবা ৫০টাকা দরে চাল কেনা আমার-আপনের জন্য সমস্যা হইলেও সিস্টেমকর্তারা যদি আগের মতই মুখে হাসি নিয়া বসে থাকে, বুঝবেন যে সিস্টেম ইজ ওকে। তাই এই সিস্টেম নিয়া মহাবিতর্ক আছে। মহাবিতর্কের দুই সন্তান- সমাজতন্ত্র ও ধনতন্ত্র(পুঁজিবাদ)। এই লেখাতে যে সিস্টেমকর্তার কথা কইতাছি, তারা পুঁজিবাদের গর্ভজাত। যাগ্গে, আপনার উদ্দেশ্য গিটার বাজানো বা ভাত খাওয়া, আর এই কার্য সিদ্ধির জন্য চাই ট্যাকা। তাই ইচ্ছা না থাকলেও আপনাকে টাকার পেছনে ছুটবে হবে, সিস্টেম তাই বলে।  কিন্তু টাকা খুঁজতে খুঁজতে আপনি যদি নিজেরে হারায়ে ফেলেন(মানুষ থেইক্যা জঙ্গলি), সিস্টেম এর দায় নিবে না। যাইক্গা, ব্যবসা বা চাকরি বা কিছু একটা করে তো কামাই করতে হয়। এই কামাই সৎ না অসৎ পথে- এইটা একটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। আরেকটা হইতে পারে কামাইটা কী উদ্দেশ্যে: এক.খাওনের জন্য; দুই. খাওন ও নিজের (অসীম)শখ-আহ্লাদ পূরণের জন্য; তিন. খাওন ও মানুষকে ডমিনেট করার জন্য; চার.  খাওন ও ভাল কাজে সহযোগিতা করার জন্য। শেষেরটার জন্যই কিন্তু পৃথিবীতে সব ভাল কাজ হয়(আবার ভাল হইতে পয়সা লাগে না)। আর যত যত সমস্যা দেখেন তিন নম্বরটার জন্য। দুই নম্বরটাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা মানুষকে কদাচিৎ বুকা বানিয়্যা থাকে।  আইজকাইল দ্যাহা যায় যে, তিন নম্বর উদ্দেশ্যটা দুই নম্বরকে সিস্টেমে ফেলে নতুন কায়দায় ডমিনেট করে থাকে। তাইলে তিন নম্বর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভাল মিল আছে। বিতর্কটা তখনই চোখে পড়ে- যখন ভাবতে হয় আমি মানুষের পক্ষে থাকুম না সিস্টেমের পক্ষে থাকুম । যার খাওনের টাকা নাই তার জন্য কি ঈশ্বরের দোহাই দিয়া চুপ কইর‌্যা থাকুম, না উপরঅলাদের সিস্টেমের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান জানামু ?



শিক্ষা নিয়ে কথা বলতে গিয়া অর্থনীতি আইয়্যা পড়লো। যাক্, এবার শিক্ষা বিষয়টা নিয়া কথা বাড়াই। শিক্ষা নিয়্যা কথা বললে শুনব ক্যারা, কারণ অর্থনীতি দলবল নিয়া হার্টে এ্যাটাক করে। ইস্, অর্থনীতিও শিক্ষার বাইরে না। যাইক্গে, তার চে বরং শিক্ষার প্রকৃত বা অ-আর্থিক বিষয় নিয়া একটু বাতচিৎ করি।  ধরেন লালন সাঁই, সে আবার কেমন শিক্ষিত ছিলেন? একটা সার্টিফিকেটও ছিল না, আবার টাকা-পয়সাও ছিল না- না করছে চাকরি, না করছে ব্যবসা- বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষা কইরা খাইতো- ওই ব্যাটা তো হিসাবে কোন পর্যায়েই পড়ে না। কিন্তু তারে নিয়া মানুষের মাতামাতির তো শেষ নাই। বিস্তর গবেষণা হইতেছে তার মুখের বাণী নিয়া। মানুষরে তিনি কী শোনাইলেন যে তারে নিয়া শিক্ষিতেরা রিসার্স করে! তাইলে আমরা যে এত পড়াখেলা করতাছি-  অনেক ডিগ্রি আছে আমার- আমাগো নিয়া তো কারো কোন চিন্তাই নাই । তাইলে আমরা কী শিক্ষিত হইলাম। বলি না যে আমাগো নিয়া ভাবতে হইব, কিন্তু সার্টিফিকেট এর ওপর বেইজ করে বইসা থাকাটা রিস্কি হইয়া যায় না? এই যে বাচ্চা বয়েস থেইকা বই নিয়া দৌঁড় পারতাছি- কী শিখতাছি। কী শিখা শিক্ষিত হইলাম? সক্রেটিস কার বই পইড়া এত পন্ডিত হইলো? এইখানে শিক্ষা নিয়া ভাবার একটা প্লট আছে, এই প্লটে একটু নজর দেন- জীবনে একটা অন্যরকম গতি অথবা মন্থর ভাব ঠিক-ই লক্ষ্য করবেন। আসলে আপনি বাইরে শুধু দেখবেন: যেমন মানুষের কান্ড, প্রকৃতির কান্ড বা বইয়ের মধ্যে বহু রকমের কান্ড; কিন্তু শিখতে হইবো নিজেকে ঝালাই কইরা-ই। যে নিজেকে ঝালাই (নিজেরে নাড়িয়া-চাড়িয়া দেখা, পৃথিবীটা ও মানুষ নাড়িয়া-চাড়িয়া দেখা,এমনকি অদেখারেও ) করছে সে-ই শিক্ষিত হইছে। সিক্রেটিসও সেরকম ছিলেন- লালন, কার্ল মার্ক্স, রবীন্দ্র নাথ, আইনস্টাইন, ডারউইন এরা প্রত্যেকেই এবং আরো অনেকে আছেন; ভবিষ্যতেও অনেকে হবেন।

আমার মনে হয় শিক্ষার মূল কাজটা আত্মিক আর এর চর্চার মধ্য দিয়াই প্রাণী থেকে আমরা মানুষ হইয়া উঠি। কিন্তু এই জায়গাটায় পুঁজিবাদ শিক্ষার লগে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করতাছে। ফরমালিটিসের টাই আমাগো গলায় ঝুলাইয়া নিজের বাপ-দাদার সম্পর্ক ভুলাইয়্যা এক গ্লোবাল ভিলেজ তৈয়ার করল পুঁজিবাদ। যেখানে আমার হাজার বছরের ইতিহাসের দাম নাই। পুঁজিবাদের একটা ছোট্ট বিষক্রিয়া হইল আর্টসের প্রতি পোলাপানের উদাসীনতা। দেখেন, বান্দুরা স্কুল থেইক্যা আর্টস উঠাই দিছে, অথচ আমরা যে এত নীতির কথা বলি, মূল্যবোধের কথা বলি, সমাজের কথা বলি- এগুলা পোলাপান কই শিখবো- একাউন্টিং পইড়া নাকি? এই আর্টস কমদামি হইয়া গেল, তার পেছনেও কাঠি ঘুরাইতেছে বাজার অর্থনীতির নিষিদ্ধফল। এখনতো বাঙলা দ্বিতীয় পত্রের সারাংশ, সারমর্ম আর ভাব-সম্প্রসারণ ছাড়া ভদ্রলোক হইবার লেখাপড়া দেখি না। যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চিন্তা করি, মেট্রিক পর্যন্ত এই কথা মানতেই হইব। এইখানে পরিবারের দায়িত্বটা অনেক বাইড়্যা গেল মা জননী।

প্রভাববিস্তার, ক্ষমতার দাপট, স্বার্থপরতা- বাজার অর্থনীতি আমাগো শিখাইতাছে। একটা মানুষের কান্না থেইক্যা একটা বিজ্ঞাপন আমার কাছে মূল্যবান হয়ে উঠে। প্রযুক্তির কান টেনে বাজারে পাঠিয়া স্থুল বিনোদনে পরিণত করা অইতাছে। অর্থনীতির কী দোষ- তারে তো  আমরাই টাইন্যা বাজারে নামাইছি। শিক্ষিত মানুষ শোয়ালের মত ধূর্ত নয়, শিক্ষিত মানুষ বুদ্ধিমান। বুদ্ধির জায়গাতে যখন চালাকি আসন পাতে, তখন গোলমাল বাঁধে। আমরা ধূর্ত হইবার চাই না, আমাদের চাতুরতার সমাজব্যবস্থা আমাদের ধূর্ত হইবার টেকনিক শিখায়। তাই আমরা তো শিক্ষিত হইবার চাই না, আমরা চাই স্ট্যাটাস। তাই নুন আন্তে পানতা ফুরায় অবস্থায় পড়ে শিক্ষার আক্ষরিক উপাধি নিয়া মাথা উচু করে বাঁচতে চাই। আর তাতে উপরঅলারা খুব একটা ব্যাজার হন না বোধ করি।


একটা সময় মুরুব্বিরা স্টুডেন্টদের  পছন্দ করতো। তাগো লগে গল্প করতো। আর এ্যহন তারা স্টুডেন্ট দেইখ্যা ভয় পায়। কারণ কখন কী উল্টাপাল্টা কইর‌্যা ফালায়! মানে স্টুডেন্টদের মধ্যে চিন্তাশীলতা, সচেতনতা, শিষ্টাচার নাকি লোপ পাইছে। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কোন আগ্রহ তেমন একটা দেখা যায় না। এক সময় স্টুুডেন্টরা সমাজ ও রাষ্ট্রের মোষ তাড়াতো আর এ্যহন দেখা যায় মোষরা তাদের নিয়া শোডাউন করে। বলতে চাইতেছি এই বিষয়গুলো ছাত্রজীবনে  ডেভেলপ না করলে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হইতে পারবেন না। রাষ্ট্রের আর সমাজের নানা সমস্যার কথা বলবেন? দেখেন সক্রেটিসও ছাড় পায় নাই, ছাড় পায় নাই যীশুখ্রীষ্ট, ছাড় পায় নাই লালনও। তাই কখনো-সখনো এসব অত্যাচার হয়ে থাকে। কারেন্ট চইল্যা গেলে আমার পক্ষে হয়ত আলাদিনের জিনের মত সবকিছু আলো করা সম্ভব না, বাট একটা মমবাতি জ্বালাইতে পারি, তাই না?


ও, একটু আগে মাথা উচু প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম। আমাগো মাথা এমন উচু হইছে যে, কারো দুঃখ আমাদের বেশিক্ষণ দুঃখিত করে না; বাসস্ট্যান্ডে অথবা কাঁচাবাজারে অশ্লিল সিনেমার পোস্টার দেইখা চুপ কইরা থাকি, এলাকার ভেতর দিয়া যে রাস্তাটা ইকরাশি গেছে সেই রাস্তা ঠিক করারও ইচ্ছা করে না, টাকা না থাকলে মানুষরে চিকিৎসা করি না- একটা মানুষ শুধু টাকার অভাবে মরে যায় বিনা চিকিৎসায়? হায় রে সভ্যতা! আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এমুন পৃথিবী অইব যখন মানুষ বইতে পড়ব: কোন একসময় এমন সিস্টেম ছিল যে কয়েকটা ছোট ছোট কাগজ যাকে টাকা বলে, সেই জিনিসের জন্য মানুষ মারা যাইত। আমেন।

আমার তো মনে হয় মানুষের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হইল, ভাল আর মন্দ বোঝার ক্ষমতা। বিষয়টা ভাবলে আপনি নিজের ভেতর কিছু একটা আবিষ্কারের গন্ধ পাইবেন। কিন্তু এই ক্ষমতার চর্চা না করে মানুষ এমন এক ‘ক্ষমতা’র চর্চা শুরু করলো- সব বিষাক্ত হইয়া গেল- যেমুন আমার-আপনার মন ও মস্তিষ্ক, তেমনি পৃথিবীর পরিবেশ। শিক্ষা তার ভেতরের রূপ হারাইয়া ধূর্ত শিয়াল হইয়্যা উঠলো।

মোদ্দা কথা হইল, প্রতিযোগিতামূলক বাজার-থিউরী দিয়া শিক্ষার অর্থ উদ্ধার করতে গেলে উপরে যা পরলেন ভুইলা যান, কারণ আপনার মাথা- ই আপনার নিজস্ব সম্পত্তি। শিক্ষ্যাবিষয়ক এই লেখাটি গৌতম বুদ্ধের বাণী দিয়া শেষ করবার চাই। বুদ্ধ বললেন, ‘হে ভিক্ষুগণ! বহুজনের হিতের জন্য, বহু জনের কল্যাণের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য, জগতের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য তোমরা দিকে দিকে বিচরণ করো, ধর্মদেশনা করো; যার আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ এবং অন্তে কল্যাণ।’

- জেমস আনজুস


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কোথাও নেই- ওস্তাদ পি. সি. গোমেজ (গমেজ)

পি.সি. গমেজ রচিত গ্রন্থের প্রচ্ছদ - †Rgm AvbRym evsjv‡`‡ki cÖL¨vZ D”Pv½m½xZ wkíx cvm Kvjm Pvj©m M‡gR(wc. ...